বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন
-আব্দুল ওয়াদুদ নোমান
(এক) যদি কোন বিষয়ে আপনার জানাশোনা না থাকে, তবে “আমি জানি না” অথবা “এই বিষয়ে আমার জানাশোনা নেই” – নিঃসঙ্কোচে, দৃঢ়তার সাথে এই কথাটি বলতে পারা একটি যোগ্যতা। না জেনে, সবজান্তার ভান ধরে ত্যানা প্যাঁচানো একটা অযোগ্যতা। ওহীর শুরুলগ্নে জিবরায়িল আ. নবিজি সা.-কে বললেন, ইকরা- আপনি পড়ুন। তখন নবি সা. ক্লিয়ারভাবে বলেছেন, আমি তো পড়তে জানি না।
(দুই) যেকেউ “ভুল” ধরিয়ে দিলে সহাস্যবদনে মেনে নেওয়া এবং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারাও একটি যোগ্যতা। তা না করে কুযুক্তি বা বিভিন্ন অজুহাত পেশ করা অথবা চেহারা মলিন হওয়া একটা অযোগ্যতা ও মুর্খতা। হযরত ওমর রা. একবার সালমান ফারসি রা. কে বললেন যে, ভাই! আপনার দৃষ্টিতে আমার মাঝে কী কী ত্রুটি দেখতে পাও? সালমান ফারসি রা. প্রথমে বলতে রাজি হননি। পরে ওমর রা. এর পীড়াপীড়িতে বললেন, আমি আপনার মাঝে দুটি ত্রুটি দেখতে পাই, যা আমার কাছে অপছন্দ লাগে। একটা হলো, আপনি দু’জোড়া কাপড় পরিধান করেন। একটা রাত্রে, একটা দিনে। আরেকটা হলো, আপনি খাবারে একাধিক আইটেম রাখেন। অথচ এ দুটি বিষয় রাসূলুল্লাহ সা. পছন্দ করতেন না। ওমর রা. কোন ধরণের প্রশ্ন ছাড়াই বললেন, এখনই এ দুটি রোগের চিকিৎসা ( সংশোধন) করে নেবো ইন শা আল্লাহ।
(তিন) দরুন, আপনি কোন এক বিষয়ে খুব পারদর্শী। অারেকজন এই বিষয়ে আপনার কাছ থেকে কিছু শিখতে চায়। এই সময় বিনম্রচিত্তে, বিরক্তিভাব ছাড়া, সাগ্রহে- তাকে কিছু শিখাতে পারাটাও একটি যোগ্যতা। তা না হলে, শিখাতে যেয়ে বিরক্তি বা তাচ্ছিল্যভাব প্রকাশ হওয়া বা ‘তুমি এসব বুঝবে না’ বলে দূরে টেলে দেওয়া একটা অযোগ্যতা। আল্লাহর ইরশাদ, আর আপনি সাহায্যপ্রার্থীকে ধমক দিবেন না। ( সুরা জুহা- ১০) অর্থগত ও জ্ঞানগত উভয় প্রকার সাহায্যপ্রার্থী এর অন্তর্ভুক্ত। উভয়কে ধমক দিতে রাসূলুল্লাহ সা. কে নিষেধ করা হয়েছে। আর সহজ ভাষায়, যে ব্যক্তি কোন শিক্ষণীয় বিষয় জানতে চায় তার জবাবে কঠোরতা ও দূর্ব্যবহার করা নিষেধ। ( মাআরেফুল কোরআন বাংলা, পৃষ্টা- ১৪৬২)
(চার) সর্বক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা ও সাধ্যর পরিধি বুঝতে পারা এবং যত কঠিন পরিস্হিতিই হোক এই পরিধির অতিরিক্ত দায়িত্ব না নেওয়া। এই নীতি উপলব্দিতে এনে মেনে চলতে পারা একটি যোগ্যতার ব্যাপার। এ নীতি না জানার কারণেই দেখা যায় সমাজে একেকজন একাধিক দায়িত্বের বোঝা কাঁধে নিয়ে বসে আছেন কিন্তু পালন করছেন না একটাও! জিজ্ঞেস করলে বলেন, অন্যান্য ব্যস্ততা আছে। সময় পাচ্ছি না। অথচ এই একটা অযোগ্যতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যক্তি, ব্যক্তির সময়, সমাজ, প্রতিষ্টান , অনেক কিছু। দেখুন, আমের ইবনে তোফায়েলের সেই প্রসিদ্ধ ঘটনা। সে অনেক পীড়াপীড়ি করে নবিজী সা.কে ধোঁকা দিয়ে নির্জনে নিয়েছিলো হত্যার জন্য। কিন্তু আল্লাহ তাআলা হত্যার কৌশলকে কুদরতিভাবে রুখে দেন। পরে নবিজী সা. তাকে ইসলাম গ্রহণের আহবান জানান। সে বললো, আমি ইসলাম গ্রহণ করলে কী পাবো? নবিজি সা. বললেন, অন্যান্য মুসলমান যা পায় তুমিও তাই পাবে। সে বললো, না, বরং আপনি বলুন আপনার মৃত্যুর পর রাজত্ব আমাকে দিবেন। যেহেতু এটা সধ্যাতীত ব্যাপার, তাই নবি সা. তা মানলেন না। সরাসরি নাকচ করে দিলেন। তখন সে বললো, তাইলে বলুন আমি মুসলমান হলে গ্রামের রাজত্ব থাকবে আমার আর শহরের রাজত্ব থাকবে আপনার। যেহেতু এটাও সম্ভবের ভিতরে ছিল না। তাই নবি সা. এটাও মানলেন না। তখন সে ক্ষিপ্ত হলো, রাগে অগ্নিশর্মা হলো। এবং রাসূলুল্লাহ সা. কে বিভিন্ন হুমকি ধমকি দিয়ে বিদায় নিলো। যাক, রাসূলুল্লাহ না. কঠিন পরিস্হিতিতেও সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব নেননি। এভাবে ভাবলে দেখা যায় আরো অনেক অযোগ্যতা আছে আমাদের মাঝে। অথচ ভানধরি যোগ্যতার! নিজেকে ভাবি কতো নিঁখুত! বিশেষকরে এ চারটি বিষয় এমন, যা সাধারণত আমাদের নজরে আসে না। অথচ এগুলো মানলে আমাদের পারস্পরিক দূরত্ব কমে আসতো। ঐক্য ও মিল মহব্বত বজায় থাকতো। বেড়ে যেতো পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ।
লেখকঃ আব্দুল ওয়াদুদ নোমান তরুণ আলেম, প্রাবন্ধিক